অণু গল্প- সংগ্ৰাম

সংগ্ৰাম
-শম্পা সাহা

 

 

“ধ‍্যাৎ ভাল্লাগে না। রোজ রোজ মাম্মাম এক খাবার দেয়। ধুর্!’

ব্যাপ্তি ওর টিফিন বক্সটা বাড়ি ঢোকার আগে যে মোড়টা পরে সেই মোড়ের রাস্তায় রাখা ডাস্টবিনে উপুড় করে। তার আগে অবশ‍্য এদিক ওদিক দেখে। কেউ দেখছে না তো?

ডাস্টবিনটা এমনিতেই উপচে পড়ছে। কিছু পড়লো ভেতরে। কয়েকটা আঙুর, আর একটা স‍্যান্ড উইচ গড়িয়ে গিয়ে পড়লো একটু দূরে।

আসলে আজ অভিলাষার জন্মদিন উপলক্ষে সবাইকে চিকেন মোমোর প্যাকেট, কেক আর চকলেট দিয়েছে। ওর পাপা ইয়া বড় গাড়ি করে সব ড্রাইভারের হাতে পাঠিয়েছে। এটাই ওদের স্কুলের রীতি। সবাই যে যার জন্মদিনে ট্রীট দেয়। ব‍্যাপ্তিও দিয়েছিল।

ওকে বাসটা মোড়ে নামিয়ে দিয়ে যাবার পর প্রায় দিনই এভাবে ও টিফিন বক্স উপুড় করে। আসলে ওর পাপা আর মাম্মাম দুজনেই ডাক্তার। তাই বিজি। ওকে বাসেই আসতে হয়। আর বাড়ি ঢুকেই সুরূপাদি ওকে খাওয়াতে বসবে। ও না খেলে সুরূপাদিকে মাম্মাম খুব বকে। তাছাড়া তিনমাস অন্তর অন্তর পাপা নিজে ওর ওয়েট চেক করে। তাই স্কুলে ফ্রেন্ডদের থেকে কিছু খেলে আর পেটে টিফিন খাবার জায়গাই থাকে না!

ও কিছুদূর এগিয়ে যেতে দুটো নেড়ি কুকুর আর একটা মানুষের মধ্যে লড়াই শুরু হল। মানুষটা শুধু দেহাবয়বে মানুষের মত। এগিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো স‍্যান্ড উইচের ওপর। বাঁ হাতে একটা ঢিল ছুঁড়ে দিল কালো কুকুরটার দিকে! মোক্ষম জায়গায় লেগেছে! বেশ বড় ঢিল! কেঁউ কেঁউ করে কালোটা পালাতে ঘেয়োটাও ওর পেছন পেছন দৌড় দিল। ওরা বুঝে গেছে এই অসম লড়াইয়ে ওদের জেতবার সম্ভাবনা নেই।

চোখ বুজে, দাঁড়িগোঁফের জঙ্গলে ভরা মুখটা হাঁ করে একটা বিরাট কামড় মেরে চিবোতে থাকে মহার্ঘ্য খাবার আর অন‍্য হাত মাছি তাড়ায়।

ব‍্যাপ্তি ততক্ষণে বাড়িতে পৌঁছে ফ্ল‍্যাটের বেল টিপেছে। ওর পেছনের সংগ্ৰাম ওর অজানাই!

Loading

Leave A Comment